সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পা মচকে গেলে কী করবেন, জেনে নিন বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৩২ অপরাহ্ন, ১২ই আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

পা মচকে যাওয়া আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি পরিচিত সমস্যা। জীবনের কোনো না সময় আমাদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেকেই এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেকে আছেন এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক ধরনের সনাতন চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন, যা মোটেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। পা মচকানো বা অন্যান্য সফট টিস্যু ইনজুরির আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার বিষয়টি তুলে ধরা হলো এই লেখায়।

দোবইস অ্যান্ড ইসকুলিয়ার ২০১৯ সালে আধুনিক এই চিকিৎসা পদ্ধতি (পিস অ্যান্ড লাভ) আবিষ্কার করেন।

পি—প্রোটেকশন

প্রথমেই আমাদের যেটা করতে হবে, তা হলো—আক্রান্ত জায়গাটিকে সুরক্ষা দিতে হবে, যাতে তা আর কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমরা বিভিন্নভাবে এই সুরক্ষা দিতে পারি। যেমন: প্লাস্টার, কোনো অর্থোটিক্স ডিভাইস, ক্রেপ ব্যান্ডেজ ইত্যাদি। এই অবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা যাতে আক্রান্ত জায়গায় কোনো লোড না নেই এবং নড়াচড়া যাতে না করতে পারি। এইভাবে থাকতে হবে ১-৩ দিন পর্যন্ত। এতে যে উপকার হবে, তা হলো—

* আমাদের টিস্যুর ভেতরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে

* যেসব টিস্যুর ফাইবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হবে না

* যেসব কারণে টিস্যুগুলো  আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা প্রতিরোধ করবে

ই—এলিভেট

পরের ধাপ হবে আক্রান্ত জায়গাটি যথাসম্ভব উঁচু করে রাখতে হবে (আক্রান্ত জায়গাটি হার্ট লেবেলের উপরে রাখতে হবে)। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলোর মধ্যে যে অতিরিক্ত পানি জমা হবে, তা দ্রুত বের করে দিয়ে হিলিং প্রসেসকে তরান্বিত করবে।

অ্যা—অ্যাভোয়েড অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি

সচরাচর আমরা যেটা করি, এই ধরনের সমস্যায় আমরা প্রথমেই ব্যথার ওষুধ খাই এবং বরফের সেঁক দিতে বলি। এটি কোনোভাবেই করা যাবে না। কারণ ব্যথার ওষুধ ও বরফের সেঁক টিস্যু হিলিংকে বাধাগ্রস্ত করে।

আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক সুরক্ষা বা আঘাত থেকে সুস্থ হওয়ার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, পুরোপুরি সেরে ওঠার ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যথার ওষুধ এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথার ওষুধ দ্রুত ব্যথা কমাতে সাহায্য করলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এছাড়া কোনোভাবেই বরফের সেঁক দেওয়া যাবে না। কারণ বরফ ইনফ্ল্যামেশন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, নতুন করে টিস্যুতে রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয়, টিস্যুতে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে। যেকোনো ধরনের টিস্যুর সেরে ওঠার জন্য প্রয়োজন অধিকসংখ্যক রক্তের ২টি উপাদান—নিউট্রিফিল ও ম্যাক্রোফেজ, যা তৈরিতে বাধা দেয় বরফ। এর ফলে টিস্যুর রিজেনারেশন ও কোলাজেন সিনথেসিস বাধাগ্রস্ত হয়, যা টিস্যুর হিলিং প্রসেসয়ের জন্য অনস্বীকার্য।

সি—কমপ্রেস

এই ধাপে আক্রান্ত জায়গাটি কোনো কিছু দিয়ে চাপ দিয়ে রাখা, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলোর মধ্যে যে অতিরিক্ত পানি বা রক্তক্ষরণ হবে, তা দ্রুত কমে যাবে। বিভিন্ন ধরনের টেপিং বা ব্যান্ডেজের মাধ্যমে আমরা এটি করতে পারি।

ই—এডুকেট

এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা সম্পর্কে রোগীকে পর্যাপ্ত ধারণা দিতে হবে। কেন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে, কীভাবে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এবং ভালো হতে কতদিন সময় লাগবে—এসব বিষয়ে রোগীকে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। সফট টিস্যু ইনজুরির ক্ষেত্রে দ্রুত যেকোনো পদ্ধতি, যেমন: ইনজেকশন বা অপারেশন ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকতে হবে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আরো পড়ুন:  কলকাতায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে, ঢাকা পারছে না কেন?

এবার তুলে ধরা যাক লাভ অ্যাপ্রোচের বিষয়টি।

এল—লোড

ব্যাথা পাওয়ার ১-২ দিন পরে আমাদের লোড অ্যাপ্রোচ শুরু করতে হবে। সেগুলো হলো—

* যত দ্রুত সম্ভব আমাদের নড়াচড়া ও এক্সারসাইজ শুরু করতে হবে

* স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে হবে, যেগুলোতে ব্যথা বাড়বে না

* ধীরে ধীরে লোড বাড়াতে হবে, যার ফলে টিস্যুগুলোও দ্রুত হিলিং হবে এবং টিস্যুগুলির ওপর লোড নেওয়ার সহ্যক্ষমতা বাড়বে

ও—অপটিমিজম

গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আমাদের যেকোনো ইনজুরিতে যথেষ্ট ইতিবাচক থাকতে হবে। ভয়, বিষণ্ণতা—এগুলো আমাদের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে (গবেষণায় প্রমাণিত)। এক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট বাস্তববাদী হতে হবে।

ভি—ভাস্কুলারাইজেশন

এই ধরনের ইনজুরিতে কার্ডিওভাস্কুলার শারীরিক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। ব্যথামুক্ত কার্ডিওভাস্কুলার কার্যক্রম আমাদের ইনজুরির জায়গায় রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দ্রুত টিস্যুগুলো সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

ই—এক্সারসাইজ

গবেষণায় প্রতীয়মান যে, পা মচকানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, যা আমাদের শক্তি, মুভমেন্ট, জয়েন্টের দৃঢ়তা বাড়াবে।

* পা মচকানো হতে দ্রুত আরোগ্য হতে হলে অতিসত্বর একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিবেন।

** মো. জাহিদ হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


এসি/  আই. কে. জে/ 


চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত

খবরটি শেয়ার করুন